আন্তর্জাতিক ডেস্ক: পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় পাঞ্জাবের ওয়াজিরাবাদ শহরে লংমার্চের সময় গুলিবিদ্ধ দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বর্তমানে ভালো আছেন। বৃৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যার দিকে ইমরান খানকে লক্ষ্য করে একে-৪৭ অস্ত্র থেকে গুলি চালায় এক হামলাকারী। এতে ইমরান খানের পায়ে অন্তত তিন থেকে চারটি গুলি বিদ্ধ হয়েছে। তবে তিনি আশঙ্কামুক্ত রয়েছেন বলে জানিয়েছেন দেশটির চিকিৎসকরা।
ডন বলেছে, গুলিতে আহত পাকিস্তান তেহরিক ই-ইনসাফের (পিটিআই) প্রধান ইমরান খানকে লাহোরের শওকত খানম হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি। তাকে দেখতে হাসপাতালে গেছেন পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী পারভেজ এলাহী।
পাঞ্জাবের এই মুখ্যমন্ত্রীর মুখপাত্রের দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হাসপাতালে ইমরান খানের সঙ্গে দেখা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী পারভেজ এলাহী। এ সময় ইমরান খান মুখ্যমন্ত্রীকে বলেছেন, ‘তিনি ভালো আছেন।’
মুখ্যমন্ত্রী পারভেজ এলাহী বলেছেন, হামলার এই ঘটনা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করা হবে। ইমরান খান ও আহত অন্যান্যদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেছেন তিনি।
এদিকে, ইমরান খানকে শওকত খানম হাসপাতালে নেওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর ওই হাসপাতালের বাইরে অবস্থান নিয়েছেন তার রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের হাজার হাজার নেতাকর্মী। এ সময় তারা ইমরান খানের সমর্থনে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেন।
পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক বিবৃতিতে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্যদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করা হয়েছে। আইএসপিআর বলেছে, গুজরানওয়ালার কাছে পিটিআইয়ের লংমার্চের সময় গুলি চালানোর ঘটনা ‘অত্যন্ত নিন্দনীয়।’
পিটিআইয়ের নেতা শাহ মাহমুদ কুরেশি বলেছেন, দলের প্রধান ইমরান খান বর্তমানে শঙ্কামুক্ত রয়েছেন। তিনি বলেন, এটি কেবল ইমরান খানের ওপর নয়, বরং পাকিস্তানিদের ওপর হামলা।
লং মার্চে হামলায় নিহত ১, আহত ৭
পাঞ্জাবের পুলিশের দেওয়া এক বিবৃতিতে ওয়াজিরাবাদে লংমার্চের সময় ইমরান খানকে লক্ষ্য করে বন্দুকধারীর গুলির ঘটনায় অন্তত একজন নিহত ও আরও সাতজন আহত হয়েছেন জানানো হয়েছে।
গোলাগুলির ঘটনায় মুয়াজ্জাম নওয়াজ নামের এক ব্যক্তি মারা গেছেন বলে বিবৃতিতে নিশ্চিত করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, হামলার স্থান থেকে এক সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশি জিম্মায় নেওয়া হয়েছে।
বিক্ষোভ ছড়িয়েছে পাকিস্তানজুড়ে
ওয়াজিরাবাদে লংমার্চ চলাকালীন পিটিআই চেয়ারম্যান ইমরান খান গুলিতে আহত হওয়ার পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে পাকিস্তানজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। দলটির হাজার হাজার নেতাকর্মী দেশের বিভিন্ন প্রান্তে রাস্তা অবরোধ করে সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করছেন বলে পাকিস্তানের গণমাধ্যমের খবরে জানানো হয়েছে।
দেশটির সংবাদমাধ্যম ডন বলছে, কোয়েটায় বিমানবন্দরগামী সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন পিটিআইয়ের নেতাকর্মীরা। রাস্তা অবরোধ করায় কোয়েটায় ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে, করাচির শারে ফয়সাল, উত্তর নাজিমাবাদ, লাঁধি, কায়েদাবাদ, উত্তর করাচি, হাব রিভার মহাসড়ক ও মৌরিপুরেও বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে।
হামলাকারী বললেন, ইমরান খানকে হত্যা করাই ছিল উদ্দেশ্য
ওয়াজিরাবাদ শহরে লংমার্চের সময় ইমরান খানকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো এক হামলাকারী পুলিশের কাছে দেওয়া ভিডিও বিবৃতিতে বলেছেন, ইমরান খান লোকজনকে বিভ্রান্ত করেছেন। যে কারণে তাকে হত্যার চেষ্টা করেছেন তিনি।
পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া সন্দেহভাজন ওই হামলাকারীর পরিচয় দেশটির গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়নি। তবে ভিডিওতে হামলাকারী বলেন, তিনি পিটিআই চেয়ারম্যানকে হত্যা করতে চেয়েছেন।
‘ইমরান খান লোকজনকে বিভ্রান্ত করছেন। আমি তাকে সহ্য করতে পারছিলাম না। যে কারণে তাকে হত্যা করতে চেয়েছিলাম। তাকে হত্যার চেষ্টা করেছি।’
তিনি বলেন, ‘আমি ইমরান খানকে হত্যার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়েছি। আমি কেবল ইমরান খানকে হত্যা করতে চেয়েছিলাম। এছাড়া আমার আর কাউকে হত্যার উদ্দেশ্য ছিল না।’
হামলাকারী এই যুবক বলেন, ইমরান খান লাহোর ছেড়ে যাওয়ার পর থেকে হত্যার পরিকল্পনা করছিলেন তিনি। তবে এই হামলায় তার কোনও সহযোগী আছে কিনা জানতে চাইলে মাথা নাড়িয়ে নেতিবাচক জবাব দেন হামলাকারী। বলেন, ‘আমার সাথে আর কেউ ছিল না। আমি একাই ছিলাম।’
ইমরান খানের সহযোগী রউফ হাসান বলেন, ইমরান খানকে গুলি করা এক হামলাকারী নিহত হয়েছেন। অন্য একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বলেন, এটা ছিল পুরোপুরি হত্যাচেষ্টা। তাকে গুপ্তহত্যার চেষ্টা করেছে। এক হামলাকারী গুলিতে নিহত হয়েছেন। অপরজনকে জিম্মায় নিয়েছে পুলিশ।
পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদ থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে পাঞ্জাব প্রদেশের ওয়াজিরাবাদে এই হামলার ঘটনা ঘটেছে। সাবেক ক্রিকেট তারকা থেকে রাজনীতিক বনে যাওয়া ৭০ বছর বয়সী ইমরান খান দেশটিতে আগাম নির্বাচনের দাবিতে লংমার্চ পালন করে আসছেন।
বৃহস্পতিবার ওয়াজিরাবাদের লংমার্চে হাজার হাজার পিটিআই কর্মী-সমর্থক উপস্থিত ছিলেন। পিটিআইয়ের মুখপাত্র ফাওয়াদ চৌধুরী বলেছেন, একটি গুলি ইমরান খানের পায়ের পাতায় লেগেছে।
রয়টার্সকে তিনি বলেন, ইমরান খান এবং (দলীয় সহকর্মী) ফয়সাল জাভেদ গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। একটি গুলি ইমরান খানের পায়ের পাতায় লেগেছে। দু’জনকেই চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
জিও টিভির এক ভিডিওতে দেখা যায়, পিটিআইয়ের কর্মী জাভেদের কাপড়ে রক্তের দাগ লেগে আছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পিটিআইয়ের এই কর্মী বলেন, আমাদের কয়েকজন সহকর্মীও আহত হয়েছেন। আমরা শুনেছি, আহতদের একজন মারা গেছেন।
চলতি বছরের এপ্রিলে পাকিস্তানের সংসদে অনাস্থা ভোটে হেরে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ক্ষমতাচ্যুত ইমরান খান। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে পাকিস্তানজুড়ে সমাবেশ করেছেন তিনি।