চট্টবাণী ডেস্ক: বিএনপির সঙ্গে এখনই জোট নয়, আগামী দিনের পরিস্থিতি দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জিএম কাদের।
তিনি বলেন, আমরা জোট করব কিনা এখনো এ বিষয়ে কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। আমরা নির্বাচনের কাছাকাছি সময়ে এসব সিদ্ধান্ত নিব। কি করব, শেষ পর্যন্ত কি হবে, সেটা এখনো আমরা জানি না। এখন আমরা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য ৩০০ আসনে প্রস্তুতি নিচ্ছি। সেভাবে আমরা প্রার্থী তৈরি করছি। আমাদের দলকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করছি।
মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) দুপুরে রংপুর নগরীর দর্শনার পল্লী নিবাসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জিএম কাদের এসব কথা বলেন।
এর আগে তিনি দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে দলের প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কবর জিয়ারত করেন।
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, এককভাবে আমাদের যে রাজনৈতিক শক্তি ও অবস্থান আছে, সেটিকে আমরা জনগণের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করছি। আমাদের একটা অতীত আছে। অতীতে যে রকম সুশাসন আমরা দিয়েছিলাম, পরবর্তীতে কোনো সরকার সেরকম দিতে পারেনি। আমরা এখন সমস্যা সমাধানের অঙ্গীকার নিয়ে জনগণের সামনে হাজির হচ্ছি। আমরা এভাবে নিজেকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করছি। নির্বাচনের আগে অবস্থা ও পরিস্থিতি বুঝে ব্যবস্থা নিব।
ইভিএমে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় দাবি করে জিএম কাদের বলেন, আমরা আগে থেকেই বলে আসছি ইভিএমে কারচুপি হতে পারে। ইভিএমের মাধ্যমে সরকারি দল প্রভাব বিস্তার করে নানাভাবে রেজাল্ট ছিনতাই করতে পারে। সাধারণ নির্বাচনে সরকারি দল এখন প্রতিনিধিত্ব করছে, সরকারি দলের অধীনে সব কিছু থাকায় তারা ক্ষমতা দেখিয়ে থাকে। রেজাল্ট নিজের পক্ষে নিয়ে যেতে পারে। এসব কথা আমরা সব সময় বলে আসছি। এর আগেও আমরা যে কথাগুলো বলেছিলাম, সেগুলো সত্য প্রমাণিত হয়েছে। ইভিএমে সুষ্ঠু ভোট হয় না, এবার নতুন নির্বাচন কমিশনার নিজেই বলেছেন। গাইবান্ধা উপনির্বাচনে সেটা প্রমাণিত হয়েছে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি প্রসঙ্গে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, আমরা দ্রব্যের দাম বেশি নিয়ে কথা বলছি। জনগণ যেন জীবিকা নির্বাহ করতে পারে, সে মহার্ঘ্য ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। সাধারণ মানুষের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে রেশন কার্ডের মাধ্যমে বা অন্য কোনোভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী সরকার দিতে পারে।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী কিছু দিন আগেও বলেছেন খাদ্য সংকটের মাধ্যমে দেশে দুর্ভিক্ষ হতে পারে। এটা মোকাবিলায় সরকারকে এখন থেকে প্রস্তুতি নেওয়া দরকার। মহার্ঘ্য ভাতা প্রদান ছাড়াও ন্যায্যমূল্যে জনগণকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পৌঁছে দেওয়াটার দাবি আমরা করছি। আমরা আগেই অর্থ সংকটসহ দুর্ভিক্ষ হবার মতো পরিস্থিতির আভাস পেয়েছি। সরকারের উচিত বড় বড় মেগা প্রজেক্টসহ অপ্রয়োজনীয় যেসব প্রজেক্ট আছে, সেগুলো চালু না রেখে বন্ধ করা।
জিএম কাদের বলেন, অর্থনৈতিক প্রভাব যেভাবে সাধারণ মানুষের ওপর পড়ছে, তাতে ব্যয় বেড়েই চলছে। এভাবে চলতে থাকলে সাধারণ মানুষের জীবনযাপন, ব্যয় নির্বাহ করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। আর দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে দেশে বিপর্যয় সৃষ্টি হতে পারে।
দলের বহিষ্কৃত সাবেক মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গার হুমকি-ধমকি প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, কে কি বলে বলুক, আমি কোনো গুরুত্ব দিচ্ছি না। যারা এসব কথা বলছেন, সেগুলা অবান্তর কথা। এসব বিষয়ে আমি মনে করি মতামত দেওয়া ঠিক না। যারা জাতীয় পার্টির নাম ব্যবহার করছে, আমরা তাদের নিয়ে মোটেও উদ্বিগ্ন নই।
এ সময় জাতীয় পার্টির মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মুজিবুল হক চন্নু, ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, আদেলুর রহমান আদেল, রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র ও রংপুর মহানগরের সভাপতি মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসির, জেলার আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল মাসুদ চৌধুরী নান্টু, সদস্য সচিব হাজী আব্দুর রাজ্জাকসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।