• জাতীয়

    থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে, নিয়মিত কলেজ করেন রংপুরে!

      প্রতিনিধি ২২ অক্টোবর ২০২২ , ৯:২১:০৮ প্রিন্ট সংস্করণ

    চট্টবাণী ডেস্ক: রংপুর নগরীর মাওলানা কেরামত আলী কলেজের জীববিদ্যা বিভাগের প্রর্দশক শিক্ষক মাসুদা বেগমের বিরুদ্ধে বিদেশে থেকেও অবৈধ প্রক্রিয়ায় নিয়মিত বেতন-ভাতার সুবিধা গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে।

    শুধু তাই নয়, কলেজ কর্তৃপক্ষের যোগসাজসে বিদেশে বসেই কলেজের হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করছেন ওই শিক্ষক। চাকরিবিধি অনুযায়ী ওই শিক্ষকের চাকরিতে বহাল থাকার সুযোগ না থাকলেও সাবেক অধ্যক্ষের আপন ছোট বোন হওয়াতে এ বিষয়ে নিরব ভূমিকা পালন করছে কলেজের গভর্নিং বডি।



    জানা গেছে, গত কয়েক বছর ধরে আমেরিকায় বসবাস করছেন শিক্ষক মাসুদা বেগম। তিনি দেশে ঠিকমতো আসেনও না। কলেজের শিক্ষার্থীদের কাছে তেমন পরিচিতও নন। তবে কলেজে না এলেও হাজিরার খাতায় তার নাম স্বাক্ষর ঠিকই রয়েছে। রংপুর নগরীর কাঁচারী বাজার সোনালী ব্যাংক শাখা থেকে নিয়মিত বেতন-ভাতাও উত্তোলন করছেন তিনি। কিন্তু বিদেশে থেকে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর, ক্লাসে পাঠদান ও বেতন ভাতা উত্তোলন কি করে, এ প্রশ্নের জবাব দিতে নারাজ কলেজ প্রশাসন।

    এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও সচেতন মহলসহ কলেজে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীদের অনেকের মধ্যে মৌন ক্ষোভ থাকলেও এ নিয়ে মাথা ব্যাথা নেই অধ্যক্ষের।

    অভিযোগ উঠেছে, কলেজ কমিটির বর্তমান সভাপতি মনোয়ার হোসেন পূর্বে সেখানকার অধ্যক্ষ ছিলেন। আর তারই আপন ছোট বোন হন শিক্ষক মাসুদা বেগম। বড় ভাইয়ের খুঁটির জোরে বিদেশে থেকেও অবৈধভাবে সব সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছেন ওই শিক্ষক।



    দীর্ঘদিন কয়েক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে পরিবার নিয়ে বসবাস করা শিক্ষক মাসুদা বেগমের বেতন-ভাতা উত্তোলন প্রসঙ্গে মাওলানা কেরামত আলী কলেজের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বারেক আলী শুরুতে কথা বলতে আপত্তি প্রকাশ করেন। একপর্যায়ে তিনি ওই শিক্ষকের যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মাসুদা বেগম কয়েক বছর ধরে বিদেশে আছেন সত্য। কিন্তু তিনি দেশেও যাওয়া আসা করছেন। এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসেও এসেছিল। দেশে থাকাকালীন কলেজে কয়েকদিন তার উপস্থিতি ছিল।

    বেতন-ভাতা প্রদানের প্রক্রিয়া বৈধ কিনা এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বেসরকারি কলেজে একবার বেতন বন্ধ করা হলে, পরে বেতন উত্তোলনে নানা জটিলতা সৃষ্টি হয়। এ কারণে তার বেতন-ভাতা বন্ধ করা হয়নি। চাকরিবিধি প্রসঙ্গ নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।



    শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও একাধিক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সাবেক অধ্যক্ষ মনোয়ার হোসেন অবসরে গিয়েও কলেজের ছায়া অধ্যক্ষ হিসেবে কাজ করছেন। তিনি কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি হয়ে নিজেকে এখনও অধ্যক্ষ হিসেবে জাহির করতে বিভিন্ন তৎপরতা চালিয়ে আসছেন। কলেজের প্রধান ফটকের পাশেই দেয়ালে মোজাইক পাথরে নিজের ছবি সম্বলিত স্মৃতিফলকের পাশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিফলকও স্থাপন করেছেন। এ নিয়ে সচেতন মহলের অনেকেই তার প্রতি ক্ষুদ্ধ।

    একজন শিক্ষক বলেন, মাওলানা কেরামত আলী কলেজের উন্নীতকরণে বর্তমান সভাপতির ভূমিকা অস্বীকার করার মতো নয়। কিন্তু তিনি নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই নিজের ইচ্ছে মতো প্রভাব খাটিয়ে সবকিছু করার চেষ্টা করছেন। কলেজের সার্বিক অনিয়মের বিষয় নিয়ে সম্প্রতি রংপুর অঞ্চলের মাধ্যমকি ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক ও জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন অন্য এক শিক্ষক।


    কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি মনোয়ার হোসেন বলেন, চলতি বছরে অসুস্থতাজনিত ছুটিতে মাসুদা বেগম যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। বর্তমানে গত তিন মাস ধরে মাসুদাকে অর্ধেক বেতন দেওয়া হচ্ছে। কোনো অনিয়ম হয়নি। বিভিন্ন রকম অভিযোগ উঠলেও এসবের সত্যতা নেই বলেও দাবি করেন সাবেক এই অধ্যক্ষ।

    কাঁচারী বাজার সোনালী ব্যাংক শাখার ম্যানেজার নন্দিতা সরকার বলেন, চলতি বছরের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত মাসুদা বেগমের অ্যাকাউন্টে নিয়মিত র্পূণ মাসের বেতন জমা হয়েছে।



    এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর রংপুর অঞ্চলের পরিচালক প্রফেসর এস. এম আবদুল মতিন লস্কর বলেন, ওই কলেজ ঘিরে বেশ কিছু লিখিত অভিযোগ রয়েছে। আমরা অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখার পাশাপাশি নিবিড়ভাবে তদন্ত করছি। তদন্ত প্রক্রিয়া শেষে অভিযোগ প্রমাণিত হলে অবশ্যই ওই শিক্ষকসহ অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

    সুত্র: ঢাকা পোষ্ট।



    আরও খবর 17

    Sponsered content