আন্তর্জাতিক ডেস্ক: অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা আর টরি এমপিদের বিদ্রোহের মুখে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার ৪৫ দিনের মাথায় পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন কনজারভেটিভ পার্টির নেতা লিজ ট্রাস। বৃহস্পতিবার দুপুরে এ ঘোষণা দেন দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত মেয়াদের এ প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ছয় সপ্তাহের সামান্য বেশি সময় দায়িত্ব পালনের পর পদত্যাগের ঘোষণা আসল লিজ ট্রাসের কাছ থেকে। তার জায়গায় নতুন প্রধানমন্ত্রী কে হবেন তা আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ঠিক করবে কনজারভেটিভ পার্টি। সে পর্যন্ত তিনি প্রধানমন্ত্রী পদে থাকবেন।
ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের পদত্যাগের পর ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে দেশের প্রধানমন্ত্রী ও কনজারভেটিভ পার্টির শীর্ষ নেতার পদে আসীন হয়েছিলেন লিজ ট্রাস। মাত্র ৪৫ দিনের মধ্যেই সেই অধ্যায়ের সমাপ্তি টানার ঘোষণা দিলেন তিনি। আর হয়ত এক সপ্তাহ প্রধানমন্ত্রী থাকবেন তিনি। সে হিসাবে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার মেয়াদ হবে মাত্র ৫২/৫৩ দিনের।
দেশটির ইতিহাসে এর চেয়ে কম সময় (মাত্র ১১৯ দিন) প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন জর্জ ক্যানিং। ১৮২৭ সালে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ১১৯ দিনের মাথায় তার মৃত্যু হয়। এর মধ্য দিয়ে ব্রিটেনের স্বল্প সময় প্রধানমন্ত্রী থাকার রেকর্ড ছিল তার। কিন্তু পদত্যাগ করায় এখন ব্রিটেনের সবচেয়ে কম সময় প্রধানমন্ত্রী পদে থাকার রেকর্ড গড়লেন লিজ ট্রাস।
গতকাল বুধবার যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট হাউস অব কমন্সে সরকারি ও বিরোধীদলীয় এমপিরা ট্রাসের সামনেই তার নেতৃত্বের ব্যাপক সমালোচনা করেছিলেন। বিরোধী লেবার পার্টির এমপিরা তার পদত্যাগও দাবি করেছিলেন।
পার্লামেন্ট সেশনে চুপচাপ থাকলেও সেশন শেষে সাংবাদিকদের কাছে আগামী পার্লামেন্ট নির্বাচনের আগ পর্যন্ত দেশের প্রধানমন্ত্রীর পদে থাকা ও দলের শীর্ষ নেতা হিসেবে কনজারভেটিভ পার্টিকে সেই নির্বাচনে নেতৃত্ব দেওয়ার দৃঢ় আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছিলেন লিজ ট্রাস।
তিনি বলেছিলেন, ‘আমি একজন যোদ্ধা, ভীরু পলাতক নই। আমি সেইসব মানুষের দলভুক্ত—যারা সামনে থাকে লড়াইয়ের জন্য সর্বদা প্রস্তুত থাকে, এবং কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে পিছপা হয় না।’
তবে বৃহস্পতিবার ১০ নং ডাউনিং স্ট্রিটের বাইরে দেওয়া বক্তৃতায় লিজ ট্রাস স্বীকার করেছেন, কনজারভেটিভ নেতা হওয়ার সময় যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা পূরণ করতে পারেননি এবং তার ওপর রাখা দলের আস্থাও রক্ষা করতে পারেননি।
‘পরিস্থিতি বিবেচনায় আমি স্বীকার করছি, যে ম্যান্ডেটের ভিত্তিতে কনজারভেটিভ পার্টির নেতা নির্বাচিত হয়েছিলাম তা পূরণ করতে পারিনি। তাই আমি মহামান্য রাজার সাথে কথা বলে তাকে জানিয়েছি যে, আমি কনজারভেটিভ পার্টির নেতার পদ থেকে পদত্যাগ করছি’, বৃহস্পতিবার বলেন ট্রাস।