• জাতীয়

    সাত সংকটের মুখে বাংলাদেশ : সিপিডি

      প্রতিনিধি ২০ অক্টোবর ২০২২ , ১০:১৮:৪১ প্রিন্ট সংস্করণ

    চট্টবাণী ডেস্ক: বিশ্ব মহামন্দায় বাংলাদেশকে ৭টি সংকটের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। সেগুলো হলো- ডলার সংকট, জ্বালানি সংকট, মূল্যস্ফীতি সংকট, খাদ্য সংকট, ইউক্রেন সংকট, কোভিড এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সংকট। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা থেকে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

    বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর ধানমন্ডিতে সিপিডি কার্যালয়ে ‘বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার আভাস ও বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ উত্তরণ কোন পথে?’ শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে সংগঠনটির পক্ষে এ কথা বলা হয়।



    সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে সংকটগুলোকে আমরা ৭টি ভাগে ভাগ করেছি। এসব সংকটের মধ্যে ডলার, জ্বালানি, মূল্যস্ফীতি ও খাদ্য সংকটের কারণে অন্যান্য সংকটগুলো আরও ঘণীভূত হচ্ছে। সার্বিকভাবে ওই সাত সংকট আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

    তিনি বলেন, বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার আভাস দেখা গেছে। বিশ্বজুড়েই মূল্যস্ফীতি ঐতিহাসিকভাবেই ঊর্ধ্বগতিতে রয়েছে। বিভিন্ন দেশে প্রবৃদ্ধি হয় নিচে অথবা নেতিবাচক দিকে রয়েছে। আমরাও সেই প্রভাব অনুভব করছি। এই সংকটটি চললাম ও ঘনীভূত হচ্ছে।



    ফাহমিদা বলেন, মূল্যস্ফীতি লাগামগীন। আন্তর্জাতিক পণ্যের দামও বেশি। আবার দেশে উৎপাদিত পণ্যের দামও বেশি। খাদ্য সংকটেরও আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এফএও পৃথিবীর ৪৫টি দেশ খাদ্য সংকটের আশঙ্কা করছে বলে জানিয়েছে, এই তালিকায় বাংলাদেশও রয়েছে।

    ফাহমিদা খাতুন তার উপস্থাপনায় বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আমরা যেসব পণ্য আমদানি করি, তার খরচ বেড়ে গেছে। সামনে কমার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। রেমিট্যান্সেও প্রবৃদ্ধি নেই। কর্মী বেশি পাঠালেও আয় তেমন হারে আসছে না। অন্যদিকে হুন্ডি খুব সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশ থেকে আসার প্রবণতাও কমে গেছে।



    তিনি বলেন, রিজার্ভ কমে যাওয়া ছাড়াও মুদ্রার বিনিময় হারও প্রভাব ফেলছে। বাজারই কিন্তু নির্ধারণ করবে ডলারের রেট কত হবে। এখন তো বাজারে ডলার নেই। বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফএর ঋণের অর্থ রিজার্ভে যুক্ত হলে বাজারে ডলারের প্রবাহ বাড়বে। তখন মুদ্রার বিনিময় হার এভাবে নির্ধারণ করা উচিত হবে না।

    ফাহমিদা খাতুন বলেন, বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের বাজার আমদানি নির্ভর। দেশে জ্বালানি তেলের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বা ডলার সংকট রয়েছে। জ্বালানি তেল আমদানি ক্রমে ক্রমান্বয়ে কমে আসছে। তারা বলছে অর্থ নেই। অর্থের প্রাপ্যতা কম। এলএনজি আমদানিও কমানো হয়েছে। টাকার অভাব যেমন রয়েছে সংকট রয়েছে সরবরাহেও। কিন্তু জ্বালানি তেলের মূল্য পূণঃবিবেচনা করা উচিত। কারণ দেশে মূল্যস্ফীতি বেশি রয়েছে। জনগণ যাতে পরিত্রাণ পায় সেটি বিবেচনা করা উচিত।



    তিনি আরও বলেন, দেশে এখন বহুমুখী সংকট রয়েছে। বহুমুখী নীতিমালা প্রয়োজন। সব মন্ত্রণালয় এটার সঙ্গে জড়িত। সবার সমন্বয়ে একটি কমিটি থাকা প্রয়োজন। বেসরকারি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকেও এই কমিটির সঙ্গে জড়িত করা উচিত।

    সিপিডির গবেষণা বলছে, ঢাকা শহরে যারা বসবাস করছেন তাদের খাদ্যপণ্যের তালিকার ১৯টি অত্যাবশ্যকীয় পণ্য রয়েছে। যা মানুষের ভোগের মধ্যে সব থাকে। ঢাকায় ৪ সদস্যের একটি পরিবারের অত্যাবশ্যকীয় সব খাদ্যসহ সার্বিক খরচ ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে ছিল ১৭ হাজার ৫৩০ টাকা, যা ২০২২ সালের ১৬ অক্টোবরের খাদ্যপণ্যের মূল্য বিবেচনায় খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২ হাজার ৪২১ টাকা।



    অন্যদিকে যদি মাছ ও মাংস বাদ দিয়ে কম্প্রোমাইজ ডায়েট হিসেবে ৪ সদস্যের পরিবারের ন্যূনতম খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৫৯ টাকা। যা ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি ছিল ৬ হাজার ৫৪১ টাকা। খাদ্য মূল্যস্ফীতির চাপ সামলাতে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের ওপর আমদানি শুল্কের হার কমাতে পারলে সাধারণ মানুষের ওপর চাপ কমে আসতো বলে গবেষণায় উল্লেখ করা হয়।

    বিফ্রিংয়ে আরও উপস্থিত ছিলেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান প্রমুখ।