চট্টবাণী: একজনকে কুড়িয়ে পেয়েছেন পথের ধারে, অন্যজনকে হাসপাতালে, আরেকজনকে রাস্তায়। কুড়িয়ে পাওয়া এ তিন কন্যা শিশুর ঠাঁই হয়েছিল সমাজসেবা অধিদফতরের শিশু নিবাসে।
সেই নিবাসেই মাতৃস্নেহে দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে বেড়ে উঠেছেন তারা। পড়ালেখা শেষে তারা এখন করছেন চাকরিও। এবার পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করার পালা। তাঁদের জীবনে উৎসবের এই উপলক্ষ এনে দিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) রাত আটটায় চট্টগ্রামের অফিসার্স ক্লাবে প্রাপ্তবয়স্ক এ তিন তরুণীর জমকালো বিয়ের আয়োজন করেছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান। স্বাভাবিকভাবেই খুশিতে আত্মহারা তিন তরুণী।
তারা বলছেন, অনেক ভালো লাগছে। পছন্দের মানুষের সঙ্গে বিয়ে হচ্ছে। এর চেয়ে খুশির খবর আর কিছু হতে পারে না। সবকিছুর জন্য আলহামদুলিল্লাহ। আমাদের মা বাবা নেই। আমার মা বাবা থাকলে যা করতেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান স্যার আমাদের জন্য তাই করছেন। আমরা তার কাছে আজীবন কৃতজ্ঞ।
বিয়ের দাওয়াতপত্র দেখে মনে হবে এটি কোনো রাজকন্যার বিয়ে। কিন্তু না, এটি এতিম তিন মেয়ের বিয়ের দাওয়াত পত্র। তবে, আয়োজনটা রাজকীয়ভাবেই করছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান। এ আয়োজনে দাওয়াত পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রীও। তিনি উপস্থিত না থাকলেও মায়ের মমতায় পাঠাবেন উপহার।
সরকারিভাবে বিয়ের আয়োজন করা এই তিন তরুণী হলেন মর্জিনা আক্তার, মুক্তা আক্তার ও তানিয়া আক্তার। তাঁরা বেড়ে উঠেন চট্টগ্রামের রৌফাবাদ সরকারি শিশু পরিবারে।
তিন তরুণীর বিয়ের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন নগরবাসী। সরকারের পক্ষ থেকে তিনকন্যাকে পাত্র মো. ওমর ফারুক, মো. নূরউদ্দিন ও হেলাল উদ্দিনের হাতে তুলে দেবেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান। এ ধরনের উদ্যোগ এবারই প্রথম নয়, গত ১৪ বছর ধরে সরকার অনেক এতিম কন্যার দায়িত্ব নিয়ে পাত্রস্থ করেছে। যার নজির অতীতে ছিল না।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, তিন এতিম কন্যার বিয়ের আয়োজন নিঃসন্দেহে একটি ভালো উদ্যোগ। মা বাবা কেউ নেই তাদের। মা বাবার সেই দায়িত্ব পালন করছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক। তাকেও আমি ধন্যবাদ জানাই, এ রকম একটা মহৎ কাজের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য। এর মাধ্যমে সমাজে একটি সুন্দর ও ভ্রাতৃত্বপূর্ণ পরিবেশ তৈরি হবে। নবদম্পতির সংসার জীবনের মঙ্গল কামনা করছি।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেন, ৭ লাখ টাকা দেনমোহরে ৩০০ বরযাত্রী নিয়ে এ তিন কন্যার বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে। সমাজসেবা অধিদফতর পরিচালিত সরকারি শিশু পরিবারে এ তিনজন মেয়ের পড়াশোনা শেষে বিয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আজ যে মেয়েদের বিয়ের অনুষ্ঠান, তারা কেউ এতিম নয়, সবাই আমাদের সন্তান।
তিনি বলেন, যেহেতু তাদের বাবা-মা নেই, বাবা-মার পরিচয় নেই, আমরা চেয়েছি এই মেয়েরা পরিচয় নিয়ে বড় হয়ে উঠুক। এজন্য একটি ধনাঢ্য পরিবারের মেয়ের যেমন করে বিয়ে হয়, তাদের গয়নাগাটি, সাজসজ্জা ও পোশাক-আশাক থেকে শুরু করে, তাদের আদর-আপ্যায়ন থেকে শুরু করে একেবারে আড়ম্বরপূর্ণভাবে এই মেয়েদের আমরা বিয়ে দিচ্ছি।
সুত্র_বাংলানিউজ।