আন্তর্জাতিক ডেস্ক: জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে রাশিয়ার নিন্দা জানানোর পরদিন ইউক্রেনের ৪০টিরও বেশি শহর ও বন্দরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। বৃহস্পতিবার দেশটির কর্মকর্তারা রাজধানী কিয়েভসহ ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলার এই তথ্য জানিয়েছেন।
এর আগে, বুধবার ইউক্রেনীয় ভূখণ্ড দখলকে ‘অবৈধ’ বলে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে রাশিয়ার নিন্দা জানানো হয়। একই দিনে ইউক্রেনের পশ্চিমা মিত্ররা দেশটিতে আরও সামরিক সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে।
রাশিয়া তার অবস্থানের পুনরাবৃত্তি করে বলেছে, ইউক্রেনকে সহায়তার মাধ্যমে পশ্চিমারা যে এই সংঘাতের সরাসরি একটি পক্ষ, সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে। একই সঙ্গে ইউক্রেনকে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোতে অন্তর্ভুক্ত করা হলে তা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা করতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়ে মস্কো।
বৃহস্পতিবার রাশিয়ান ফেডারেশনের নিরাপত্তা পরিষদের ডেপুটি সেক্রেটারি আলেকজান্ডার ভেনেডিক্টভ রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা তাসকে বলেছেন, কিয়েভ ভালোভাবেই অবগত যে এই ধরনের পদক্ষেপের অর্থ নিশ্চিতভাবেই উত্তেজনা বৃদ্ধিকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে টেনে নিয়ে যাবে।
গত মাসের শেষের দিকে ইউক্রেনের আংশিকভাবে দখলকৃত চারটি অঞ্চলকে রুশ ভূখণ্ড হিসাবে ঘোষণার জন্য মস্কোতে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। রুশ প্রেসিডেন্টের এই আয়োজনের পরপরই দ্রুতগতিতে ন্যাটো সামরিক জোটের সদস্যপদ পাওয়ার জন্য অনেকটা আকস্মিকভাবে আবেদনের ঘোষণা দেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর জেনারেল স্টাফ বলেছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় ইউক্রেনের ৪০টিরও বেশি বসতিতে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে। অন্যদিকে, ইউক্রেনের বিমান বাহিনী রাশিয়ার ২৫টি লক্ষ্যবস্তুতে অন্তত ৩২ বার হামলা চালিয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে ইউক্রেনীয় বন্দরনগরী মিকোলাইভের মেয়র ওলেকসান্দার সেনকেভিচ বলেছেন, দক্ষিণাঞ্চলীয় শহরটিতে ব্যাপক গোলাবর্ষণ করা হয়েছে। তিনি বলেছেন, একটি পাঁচতলা আবাসিক ভবনে হামলা হয়েছে। এতে এই ভবনের উপরের দু’টি তলা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। ভবনের বাকি অংশ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছে। ভবন ধসের স্থানে কাজ করছেন উদ্ধারকারীরা।
এছাড়া কৃষ্ণ সাগরের কাছে দক্ষিণাঞ্চলীয় মিকোলাইভ শহরের বাগ নদীবন্দর ও সেখানকার একটি জাহাজ নির্মাণ কেন্দ্র রাশিয়ার ভারী বোমা হামলার শিকার হয়েছে। বৃহস্পতিবার ভোরের দিকে রাশিয়া বিস্ফোরক ড্রোন ব্যবহার করে রাজধানী কিয়েভের একটি বসতিকে লক্ষ্যবস্তু করেছে বলে আঞ্চলিক প্রশাসনের টেলিগ্রাম অ্যাকাউন্টে জানানো হয়েছে।
কিয়েভের আঞ্চলিক গভর্নর ওলেক্সি কুলেবা বলেছেন, প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী ইরানের তৈরি গোলাবারুদ ব্যবহার করে এই হামলা চালানো হয়েছে। আর ইরানের তৈরি এই অস্ত্র ‘কামিকাজ ড্রোন’ নামে পরিচিত।
প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির কার্যালয়ের উপপ্রধান কিরিলো টিমোশেঙ্কো বলেছেন, ড্রোন হামলায় গুরুত্বপূর্ণ কিছু স্থাপনার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
নিপ্রোপেৎরোভস্ক অঞ্চলের নিকোপোল শহরের ৩০টিরও বেশি বহুতল ভবন, ব্যক্তিগত বাড়িঘর, গ্যাস পাইপলাইন এবং বিদ্যুৎ সঞ্চালনের লাইনে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে। এতে ওই শহরের ২ হাজারেরও বেশি পরিবার বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়েছে বলে আঞ্চলিক গভর্নর ভ্যালেন্টিন রেজনিচেঙ্কো টেলিগ্রামে জানিয়েছেন।
তবে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এই খবরের সত্যতা তাৎক্ষণিকভাবে যাচাই করতে পারেনি বলে জানিয়েছে। ন্যাটোর মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ বলেছেন, রাশিয়ার এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা দুর্বলতার লক্ষণ। রাশিয়া আসলে যুদ্ধক্ষেত্রে হেরে যাচ্ছে।
সূত্র: রয়টার্স।