চট্টবাণী: বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমাদের আন্দোলনের মূল লক্ষ্য এই সরকারকে অর্থাৎ শেখ হাসিনাকে এখনই পদত্যাগ করানো। তার ক্ষমতায় থাকার কোনো অধিকার নেই।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা বলেন যে, দুর্ভিক্ষ আসছে, কম খান, বাতি কম জ্বালান, পানি কম ব্যবহার করুন। এসব কথা বলছেন এখন। আপনারা আছেন কেন? বিদায় হন। আমি আগেই বলেছি সেফ এক্সিট করুন। নিরাপদে চলে যান। তা না হলে পালাবার পথটাও খুঁজে পাবেন না।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, শেখ হাসিনা আপনি পদত্যাগ করুন। আজ থেকে যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, সেই আন্দোলন আমরা সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে দেব। সেই আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে এই সরকারের অবশ্যই পতন ঘটাব এবং জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করব।
বুধবার (১২ অক্টোবর) চট্টগ্রাম নগরের পলোগ্রাউন্ড মাঠে আয়োজিত গণসমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। নিত্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদ, পাঁচ নেতা হত্যাকাণ্ডের বিচার এবং খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় গণসমাবেশের আয়োজন করা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার বাংলাদেশের সমস্ত অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে। সেজন্য আমরা বলেছি অবিলম্বে এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। এই সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। আমরা বলেছি বিলুপ্ত করে নিরপেক্ষ সরকারের তত্ত্বাবধায়কের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। সেই সরকার নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করবে। সেই নির্বাচন কমিশন গঠন হলে সব রাজনৈতিক দলগুলোকে এক করে নিরপেক্ষ একটি নির্বাচন হবে। সেই সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে পার্লামেন্ট গঠন হবে। সেই সরকার হবে জনগণের সরকার।
তিনি বলেন, আন্দোলন শুরু হয়েছে দেশকে মুক্ত করার জন্য, গণতন্ত্রকে মুক্ত করার জন্য। এই দেশকে আরেকবার পরাজয় থেকে মুক্ত করার জন্য আন্দোলন শুরু হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে শুরু করেছি গণতন্ত্রকে মুক্ত করার আন্দোলন, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার আন্দোলন৷ তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার আন্দোলন। আর এই আন্দোলনের সূচনা হলো চট্টগ্রাম থেকে।
তিনি বলেন, সারাদেশে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের একটাই কাজ। তা হলো জনগণের পকেট কেটে অর্থ কামিয়ে বিদেশে পাচার করা। আমরা সেই বাংলাদেশ চাই, যে বাংলাদেশের স্বপ্ন আমরা ১৯৭১ সালে দেখেছিলাম, যে স্বপ্ন জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়া দেখেছিলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা শুনেছি বিদ্যুতের দাম বাড়বে। সবকিছুর দাম এই সরকার বাড়িয়েছে। সবকিছুর দাম বাড়াতে হয় কেন? কারণ একটিই। তারা লুট করে, চুরি করে ডাকাতি করে। জনগণের পকেট থেকে টাকা নিয়ে টাকা বিদেশে পাচার করে। কানাডা, লন্ডন ও মালয়েশিয়ায় বাড়ি করে। আর আমার দেশের মানুষ না খেয়ে মারা যায়। খুব বড় বড় কথা বলে। কিন্তু দেশের শতকরা ৪২ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে।
তিনি বলেন, জনগণের সরকার গঠন করা হলে আমরা সব সমস্যা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে সমাধানের চেষ্টা করব। চাল, ডাল, তেল ও বিদ্যুতের দাম কমিয়ে আনার চেষ্টা করব। বেকারদের চাকরির ব্যবস্থা করব।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজ দেশে কারো নিরাপত্তা নেই। দিনে দুপুরে ডাকাতি হয়। মা-মেয়েদের কোনো সম্ভ্রম রক্ষা হয় না। মানুষকে হত্যা করা হয়। খুন-গুম করা হয়। এমন এক অবস্থা এসেছে, র্যাবকে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। আমি বলি র্যাবকে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে হবে না। নিষেধাজ্ঞা দিতে হবে শেখ হাসিনার সরকারকে। কারণ হাসিনা সরকারের নির্দেশেই গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, কাস্টডিতে নির্যাতন করে মেরে ফেলা হয়েছে এই সরকারের আমলে। তারা নাকি কিছু জানে না। বলে অনেকে লুকিয়ে আছেন।
তিনি বলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের লোকজন কিছুদিন আগে এসে বলেছেন, এখানে গুম হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৭৪ পৃষ্ঠার রিপোর্টেও তারা বলেছেন বাংলাদেশে মানবাধিকার নেই। দেশে গুম হয়, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হয়। এখানে বিচারবিভাগ স্বাধীন নয়।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বর্তমান সরকার আবার নির্বাচন করতে চায়। নির্বাচন করতে একটা ইলেকশন কমিশন গঠন করেছে। কোন নির্বাচন কমিশন? যে নির্বাচন কমিশনকে ডিসি-এসপি মানেন না!
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন তাদের (ডিসি-এসপি) ডেকেছে। নির্বাচন কমিশনার তাদের বলছেন, নির্বাচন ঠিক করে করবেন। ডিসি এসপিরা বলেছেন, আপনার কথা আমরা মানি না। আমরা শুধু শেখ হাসিনার কথা মানি। তাদের দিয়ে আপনি নির্বাচন করবেন? এই দেশের মানুষ নির্বাচন হতে দেবে? অসম্ভব! এখানে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না।
ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়া গৃহবন্দি, চিকিৎসারও সুযোগ পাচ্ছেন না। কতটা নিকৃষ্ট হতে পারে তারা? তারা বলে আমরা কথা বললে, খালেদা জিয়াকে আবার জেলে নেবে। খালেদা জিয়া কখনো জেলের ভয় পান না। বাংলাদেশের মানুষ জেলের ভয় পায় না।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব আবুল হাসেম বক্করের সঞ্চালনায় গণসমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহাজাহান, মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন।
আরও বক্তব্য রাখেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকার, এস এম ফজলুল হক, কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিভাগীয় সমাবেশের সমন্বয়কারী মাহবুবের রহমান শামীম, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ভিপি হারুনর রশীদ প্রমুখ।